হজের অন্যতম নিদর্শন মাকামে ইবরাহিম

বাইতুল্লাহ। মহান আল্লাহর ঘর। ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজরিত এ পাথর। মহান আল্লাহর কুদরতি আদেশে কাবা ঘর নির্মাণের সময় তা লিফটের কাজ করে। উপরে উঠার প্রয়োজন হলে উপরে উঠে যেত। আর নিচে নামার প্রয়োজন হলে নিচে নামত। পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণ করার সময় হজরত ইবরাহিম আলাইহিস পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম এ পাথরটি নির্বাচন করেছিলেন।

মাকামে ইবরাহিম এর উৎস

হজরত আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- ‘নিশ্চয়ই হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম বেহেশতের দুটি ইয়াকুত পাথর। আল্লাহ এই দুটি পাথরের নূর মিশিয়ে দিয়েছেন। এগুলোর আলোতে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত ভূখ- আলোকোজ্জ্বল হয়ে যেত।’ (সুনানে তিরমিজি)

বর্ণিত আছে যে, হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম মাকামে ইবরাহিম পাথর নিয়ে এসে হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালামের পায়ের নিচে রেখে দেন।

মাকামে ইবরাহিম স্থাপন

ইমাম বাইহাকি রহ. এর এক বর্ণনায় জানা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কাল থেকে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খিলাফাতের সময় পর্যন্ত এ পাথর বাইতুল্লাহর সঙ্গে মিলিত ছিল।
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খিলাফাতের সময়কালে বন্যার ¯্রােতে এ পাথরটি ভেসে যায়। পরে তিনি তা সংগ্রহ করে বাইতুল্লাহ থেকে একটু দূরে সরিয়ে অন্য পাথর দিয়ে স্থায়ীভাবে পরিবেষ্টিত করে রেখে দেন। সে সময় থেকে আজও মাকামে ইবরাহিম নামের ঐতিহাসিক পাথরটি কাবা চত্ত্বরে কাঁচ দিয়ে ঘেরা অবস্থায় ঐ একই স্থানে সংরক্ষিত আছে।

লিফটের প্রেয়োজন পূরণে মাকামে ইবরাহিম

তা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কাবা শরিফ নির্মাণ কালে লিফটের কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন। কাবার গাঁথুনি যখন ধীরে ধীরে ওপরের দিকে ওঠছিল তখন ওপরের দিকে গাঁথুনি দিতে তিনি এ পাথরের ওপর উঠলে সেটি আল্লাহর কুদরতে ওপরে ওঠে যেত। নিচে নামার প্রয়োজন হলে নিচে নামত।

যা ছিল মহান আল্লাহর অনন্য নিদর্শন। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা পিতা-পুত্রের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ পাথরটির নিকটে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং (সেই সময় কে স্মরণ কর) যখন কাবাগৃহকে মানবজাতির সম্মিলনক্ষেত্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম। (এবং বলেছিলাম) তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে (ইবরাহিমের দাঁড়ানোর জায়গায়) নামাজের জায়গা হিসেবে গ্রহণ কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৫)

আল্লাহ তাআলার এ নির্দেশেই বুঝা যায় যে, মাকামে ইবরাহিমের মর্যাদা অনেক বেশি। আর হাজরে আসওয়াদ এবং মাকামে ইবরাহিম মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার এবং প্রাচীন নির্দশন।

এ ঐতিহাসিক জান্নাতি পাথরটিতে হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালামের পায়ের ছাপ এখনও বিদ্যমান। হজ ওমরা ও জিয়ারতকারীরা কাবা চত্ত্বরে কাঁচ ঘেরা মাকামে ইবরাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন এবং তা স্বচক্ষে দেখেন।

পিতা-পুত্রের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর যখন কাবা ঘর নির্মাণ শেষ হয়; তখন আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে বিশ্বব্যাপী হজের আহ্বান জানানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
মুসলিম উম্মাহ তাওয়াফ সম্পন্ন করার পর মাকামে ইবরাহিমের নিকট দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। আল্লাহর নির্দেশে এ স্থানে নামাজ আদায় করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সেই পাথর ও স্থান এখনো বিদ্যমান।

মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে হজ ও ওমরা পালন করার তাওফিক দান করুন। এবং ঐতিহাসিক ইসলামিক নিদর্শন স্বচক্ষে দেখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Tag: বাইতুল্লাহ হাজরে

আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম হজ ও ওমরা