তিসি

তিসি তেল ও আঁশ উৎপাদনকারী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ইংরেজিতে একে Flax বলে। তিসির বৈজ্ঞানিক নাম Linum usitatissimum। এটা শণ নামেও পরিচিত। Linaceae গোত্রের এ ফসল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অনেক দেশেই আবাদ হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাষযোগ্য তিসির জাতটি সম্ভবত এদের একটি বন্য প্রজাতি Angustifolium থেকে প্রাচীনকালে উদ্ভূত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে মিসরে সুন্দর লিনেনজাতীয় বস্ত্র তৈরিতে এর ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে তিসি চাষ করে এর বীজ ও আঁশ আহরণ করা হয়। তিসিগাছ ৩০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়। এর মূল কাণ্ড সরু লম্বা এবং শিকড় খাড়া হয়ে থাকে। প্রতি ফুলে নীল, সাদা অথবা হালকা গোলাপি রঙের পাঁচটি পাপড়ি থাকে। নীল অথবা হলুদ রঙের পরাগধানী থাকে ১০টি। ভোরবেলায় ফুল ফোটে এবং বিকেলে পাপড়ি ঝরে যায়। চকচকে, উজ্জ্বল চ্যাপটা বীজ বাদামি অথবা হলুদ রঙের হয়। বীজগুলো লম্বায় প্রায় এক সেন্টিমিটার হয়। তিসির কাণ্ডের বাকল বা ছাল থেকে আঁশ তৈরি করা হয়।

মাঝারি দো-আঁশ মাটি অথবা ভালোভাবে নিষ্কাশিত কাদামাটির জমিতে তিসি ভালো জন্মে। বীজ বপনের প্রায় ১০০ দিন পর আঁশ সংগ্রহের জন্য ফসল আহরণ করা হয়। ওই সময় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বীজ পাকে। বীজ নিতে চাইলে আরো ১৫-২০ দিন পর ফসল আহরণ করতে হয়। ফসল কাটার পর শুকনা তিসিগাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তেল নিষ্কাশন এবং পরবর্তী বছর বীজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ও পশুখাদ্য তৈরিতে তিসির ব্যবহার ব্যাপক। আঁশ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের কাণ্ড ৭-২১ দিন পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। জাগ দেওয়ার এ পদ্ধতি অনেকটা পাট থেকে আঁশ সংগ্রহের মতো। ভালোভাবে শুকিয়ে এ আঁশ পরে বস্ত্র তৈরির কাজে লাগানো হয়। একসময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় তিসির আঁশ বেশি উৎপন্ন হতো। এখন উৎকৃষ্টমানের আঁশ পাওয়া যায় বেলজিয়াম ও তার নিকটবর্তী দেশগুলো থেকে।

বীজ থেকে উৎপন্ন তেলের রং হলুদ থেকে বাদামি। বাংলাদেশে রবিশস্য হিসেবে তিসি চাষের প্রধান এলাকা খুলনা, যশোর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলা। আবাদি জমি প্রায় চার হাজার ৭৭১ হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপন্ন বীজ প্রায় দুই হাজার ৯৭০ মে টন। বীজ থেকে ৩০-৩৮ শতাংশ তেল এবং প্রায় ২০ শতাংশ প্রোটিন পাওয়া যায়। বার্নিশ, পেইন্ট ইত্যাদির উপাদান হিসেবে তিসির তেল ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া কৃত্রিম চামড়ায় ও ছাপাখানার কালিতে এর ব্যবহার রয়েছে।