মন কেড়ে নেয় অপরূপা ফুরোমন পাহাড়

রূপের রানি খ্যাত রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য পেখম মেলে সব ঋতুতেই। প্রকৃতির নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধা রূপের রানি রাঙ্গা

রাঙ্গামাটির গহীন অরণ্য, পাহাড়ি প্রকৃতির রূপের আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে ভীষণ প্রিয়। তাই তো দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন প্রকৃতির এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

যে রূপে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা; সে রূপে রয়েছে সবুজ অরণ্যে ঢাকা পাহাড়, কাপ্তাই হ্রদের বয়ে চলা স্রোতধারা, প্রকৃতির আদি সৌন্দর্য। রাঙ্গামাটির আরও গহীনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য রূপের পসরা। তেমনই অনন্য এক সৌন্দর্যের নাম ‘ফুরোমন পাহাড়’। অপার্থিব সৌন্দর্যের এ পাহাড় সকলকে বিস্মিত করবেই।

রাঙ্গামাটি শহরের অদূরে ফুরোমন পাহাড়ের অবস্থান। চাকমা ভাষায় ফুরোমনের অর্থ ফুরফুরে মন। এ পাহাড়ের চূড়ায় মন ফুরফুরে হয়ে যায় বলে পাহাড়ের নাম ফুরোমন। পাহাড়টির উচ্চতা ১ হাজার ৫১৮ ফুট। চূড়ায় দেখা যায় অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পুরো রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ি বাঁক, খাড়া পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৬০০ ফিট উঁচুতে প্রায় ৪০০ ধাপ খাড়া সিঁড়ি বেয়ে পেয়ে যাবেন এক সমুদ্র নির্জনতা।

নির্জন পরিবেশ আর কাপ্তাই হ্রদের বিশাল জলরাশির দেখা মেলে পাহাড় থেকে। এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য সকলকে বিমোহিত করবে। ফুরোমনের চূড়া থেকে পাখির চোখে দেখা যায় লেকের বিস্তৃত জলরাশি। নীল জলরাশির কাপ্তাই লেক, স্বচ্ছ নীলাভ জল আর বিস্তৃত আকাশ দেখে মনে হতে পারে পাহাড়ের মধ্যে সমুদ্রের তীরে পৌঁছে গেছে। শীতল বাতাস ছুঁয়ে থাকে লেকের নীল জল, পাহাড় পেরিয়ে কাছে-দূরে কেবল নীল জলরাশি। পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে চট্টগ্রাম শহর, বন্দরে ভাসমান জাহাজের মাস্তুল। তার সঙ্গে দেখা যায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সবটুকুই দেখা যাবে পাহাড়ের চূড়ায়।

সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশে মেঘের মিতালি ঘটে ফুরোমন পাহাড়ে। চারিদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক, প্রজাপতির স্বাধীন ছুটে চলা, বুনোপোকাদের ব্যস্ততা, হাজার বছরের পাতাঝরা গাছের উত্তোলিত আহ্বান, সামনে সবুজে ঘেরা পুরো রাঙ্গামাটি জেলা, অপার সৌন্দর্যে হারাতে আর কী লাগে! এখানে বাতাস আর নীরবতার খেলা চলে সর্বক্ষণ।

পাহাড় চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধ মন্দির। ঠিক যেন মনে হয় এই মেঘের দেশে প্রকৃতির মায়ায় গৌতম বুদ্ধ নীরব হয়ে বসে থাকেন। এ সৌন্দর্যের কথা শহরবাসী তেমন একটা জানে না। ঠিক তেমনই পর্যটকদের কাছেও এখনো অপরিচিতই রয়ে গেছে এ পাহাড়ের রূপের কথা। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় শুষ্ক মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে এখানে যাতায়াত করা কষ্টকর।

পাহাড়ের পাদদেশে যাওয়ার আগে যে সাইনবোর্ডটি রয়েছে, তার পাশে বসে পাহাড়ি বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান, স্থানীয়রা এখানে পাহাড়ি নানা ফলসহ অনেক কিছু বিক্রি করে থাকেন। পর্যটকরা চাইলেই এখান থেকে পাহাড়ি ফলও খেতে পারে।