পেনসিল

পেনসিল লেখা ও আঁকার একটি উপকরণ। এটি দেখতে সরু ও লম্বাটে। এর মাঝে কঠিন রঞ্জক পদার্থ থাকে। এই রঞ্জক পদার্থ একটি প্রতিরক্ষামূলক কেসিংয়ের মাঝে সরু অবস্থায় বিদ্যমান। পেনসিলের মূল লেখার কাজটি করে এই রঞ্জক পদার্থটি। কাগজ বা অন্য কোনো মসৃণ বস্তুতে রঞ্জক পদার্থটির সাহায্যে ঘর্ষণের মাধ্যমে চিহ্ন এঁকে লেখা ও আঁকা যায়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শিশুর হাতেখড়ি হয় পেনসিলের সাহায্যে।

প্রথম পেনসিল ব্যবহার করে প্রাচীন রোমানরা। তবে রোমানদের পেনসিল এখনকার প্রচলিত পেনসিলের মতো ছিল না মোটেই। রং করতে যে রকম তুলি ব্যবহার করা হয়, রোমানরা সে রকম এক ধরনের পেনসিল ব্যবহার করত প্যাপিরাসে লেখালেখির জন্য। প্যাপিরাসগাছের বাকল শুকিয়ে তাতে রোমানরা লেখালেখি করত। তাই ওই কাগজ ধরনের জিনিসটার নামও হয়ে গিয়েছিল প্যাপিরাস। আর পেনসিল নামটা এসেছে লাতিন শব্দ ‘পেনিসিলিয়াস’ থেকে। পেনিসিলিয়াস মানে হচ্ছে ছোট্ট লেজ।

১৫০০ থেকে ১৫৬৫ সালের সময়টায় ইংল্যান্ডের বোরোডেল নামে এক জায়গায় গ্রাফাইটের একটা বিশাল খনি পাওয়া যায়। সেই খনি আবিষ্কার থেকেই আধুনিক পেনসিলের ইতিহাসের শুরু। ১৫৬০ দশকে সিমোনিও ও লিন্ডিয়ানা নামের ইতালিয়ান দম্পতি সর্বপ্রথম কাঠের কেসে গ্রাফাইট রেখে আধুনিক পেনসিল তৈরির নীলনকশা বানান।

১৮১২ সালে আমেরিকার আলমারি নির্মাতা উইলিয়াম মানরো কাঠের খাপে শিস ঢুকিয়ে কাঠপেনসিল তৈরি করেন। তিনি এটাকে আরো উন্নত করে ১৮২১ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে শিস তৈরির জন্য গ্রাফাইট পাউডারের সঙ্গে কাদামাটি মিশিয়ে উত্তপ্ত করা হয়। সিংহল, সাইবেরিয়া, আমেরিকা ও ইতালিতে প্রচুর গ্রাফাইট পাওয়া যায়।

১৮৫৮ সালের ৩০ মার্চ হাইমেন লিপম্যান পেনসিলের লেখা মোছার জন্য পেনসিলের এক মাথায় একটি ধাতব খাঁজের মধ্যে ইরেজার বা রাবার সংযুক্ত পেনসিল তৈরির স্বীকৃতি পান। প্রয়োজন, ব্যবহার ও ভোক্তা আকর্ষণের কথা মাথায় রেখে এখন বানানো হচ্ছে নানা প্রকারের পেনসিল। যেমন—গ্রাফাইট পেনসিল, কেসবিহীন পেনসিল, কাঠকয়লা পেনসিল, কার্বন পেনসিল, মোমের তৈরি রং পেনসিল, জলরং পেনসিল, কাঠমিস্ত্রির পেনসিল, প্লাস্টিক পেনসিল প্রভৃতি।

আবার পেনসিলের কালির ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে HB, 2B, 4B, 6B, 8B প্রভৃতি বিভিন্ন মাত্রার পেনসিলও আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন কম্পানির পেনসিল বাজারে পাওয়া যায়।