করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক

চীনের রাস্তায় পথচারীদের যে ছবিটি এখন সবচেয়ে বেশি পরিচিত তা হলো মাস্কে নাক-মুখ ঢেকে চলা।

২০১৯ সালের শেষ দিকে ‘করোনা ভাইরাস’ নামে নতুন এক ভাইরাস শনাক্ত করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে। দেশটির কেন্দ্রীয় হুবেই প্রদেশের উহান রাজ্যে ‘জন্ম’ নেওয়া এ ভাইরাসটি ২০২০ সালের শুরুতে এখন বিশ্বের জন্য নতুন ‘হুমকি’ হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ এরইমধ্যে চীনের বাইরে ভাইরাসটি আরো অন্তত ১২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আর চীনে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত রয়েছে আরো এক হাজার ৩০০ জনের বেশি।

করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। এটি শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় করে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটাতে পারে।

এদিকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রতিষেধক তৈরি করতে সক্ষম হননি বিজ্ঞানীরা। আর ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় মাস্কে মুখ-নাক ঢেকে বাইরে বের হচ্ছেন চীনারা। যদিও এরইমধ্যে চীনের ১৪টি শহরের বাসিন্দাদের আগামী ১৪ দিন ঘরের ভেতরে থাকতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্ন হলো এভাবে মাস্ক ব্যবহার করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব কিনা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার সহায়ক হতে পারে, যদি সঠিক আবহাওয়া ও সঠিক উপায়ে এটি ব্যবহার করা হয়।

এখনই মাস্ক ব্যবহারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি জানিয়ে জনগণকে সচেতন থাকতে বলেছে মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিভাগ। তবে চীনের জন্য বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। ফলে দেশটিতে বেড়েছে মাস্কের চাহিদা। যার ফলে এর যোগান দিতে উৎপাদন বাড়িয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।

জর্জিয়ার আটলান্টার ইমোরি ইউনির্ভাসিটি স্কুল অব মেডিসিনের সহকারী প্রভাষক মেরিবেথ সেক্সটন জানান, সর্বাধিক পরিহিত, সস্তা এবং ডিসপোজেবল মাস্ক, যা সার্জিক্যাল মাস্ক হিসেবে পরিচিত, এটি করোনা ভাইরাসকে আটকাতে পারে, তবে নির্মূল করতে পারে না। এমনকি নিখুঁতভাবে ব্যবহারের পরও, এই মুখোশগুলো থেকে কোনো ভাইরাস বা রোগ সংক্রামক জীবাণু পাশ দিয়ে পিছলে যেতে পারে বা চোখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এ ধরনের সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণত হলুদ বা নিল রংয়ের হয়ে থাকে। যা রাবারের মাধ্যমে শক্তভাবে কানের মধ্যে আটকানো যায়। এর মাধ্যমে মুখ, চিবুক ও নাক ঢাকা সম্ভব হয়। আর এসব মাস্কের ওপরে একটি লোহার স্ট্রিপ থাকে, যা সহজে মুখ-নাক ঢেকে রাখে।

তবে ব্যবহারের পাশাপাশি এ ধরনের মাস্ক সঠিকভাবে খোলার বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খোলার সময় খেয়াল রাখা উচিত যেন এতে কোনো ময়লা না লাগে এবং একবারে খোলা যায়।

অন্যদিকে চীনে হঠাৎ করে মাস্কের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় চাহিদার যোগান দিতে ব্যাপক হারে মাস্কের উৎপাদন বাড়িয়েছে চীনা কোম্পানিগুলো। কর্মীদের বেশি সময় কাজ করে মাস্ক উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনাও দিচ্ছে।

চীনা মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লেনহিনের জেনারেল ম্যানেজার কাও জুন জানান, এখন পর্যন্ত আমি যা জেনেছি, তাতে মাস্কের ব্যাপক সংকট রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলে পরিস্থিত আরো মারাত্মক হবে। শুধু উহান নয়, এরইমধ্যে চীনজুড়ে হাসপাতালের কর্মীরা মাস্ক স্বল্পতায় পড়েছেন।

তাদের কোম্পানি প্রতিদিন চার লাখ পিস মাস্ক উৎপাদন করতে সক্ষম হলেও বর্তমানে চাহিদা দুই কোটিতে পৌঁছেছে বলে জানান কাও জুন।

আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় যাদের কাছে মাস্ক রয়েছে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ তা স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে পাঁচগুণ বাড়িয়েছেন বলে জানা গেছে।

চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে মার্কিন কোম্পানিগুলোও মাস্ক উৎপাদন বাড়িয়েছে। উত্তর ক্যারোলিনার মাস্ক উৎপাদন প্রতিষ্ঠান হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং চীন থেকে মাস্ক উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের জানানো হয়েছে। এরইমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। মিনেসোটার ৩এম নামের একটি কোম্পানিও মাস্ক উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছে।

করোনা ভাইরাসে চীনে শেষ খবর পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার তিনশ ছাড়িয়েছে।

তবে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন। এরইমধ্যে আক্রান্তদের চিকিৎসায় নতুন একটি হাসপাতাল নির্মাণের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ২৫ হাজার বর্গফুটের হাসপাতালটি রোগীদের চিকিৎসাসেবায় কাজ শুরু করবে। যাতে শয্যা থাকবে এক হাজার।

আর ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য চীনের অন্তত ১৪টি শহরে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব শহরে অন্তত চার কোটি মানুষের বসবাস। একইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক পর্যটন স্পট ও খাবারের আন্তর্জাতিক চেইন শপ। ফ্লাইট বাতিল করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স সংস্থা।