করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বনবির নসিহত মেনে চলছে চীন

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের উদ্ভব হয়। বর্তমানে এ শহর ছাড়াও ১৩টির বেশি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। যার কোনো প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত না হওয়ায় বিশ্বনবির নসিহত মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শহরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যে অন্যতম।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ভাইরাসে চীনে মারা গেছে ১৩২ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ১৯৩ জন।

গবেষকরা ধারণা করছেন, যদি এ ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তাহলে প্রায় ছয় কোটি মানুষ মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে। যার কোনো প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়নি এখনো।

মারাত্মক মরণব্যাধি এ করোনাভাইরাস। এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে কুরআন সুন্নাহে কী ধরনের নসিহত রয়েছে তা অনুসরণ করাই সবার জন্য জরুরি।

সম্প্রতি চীন করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার সাধারণ যে উপায় অবলম্বন করছে, দেড় হাজার বছর আগে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে উপদেশ দিয়ে গেছেন।

এ রোগের সয়লাব ঠেকাতে চীন সরকার হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে রোগীসহ কোনো মানুষকে অন্য শহরে পাঠাবে না। আবার অন্য শহর থেকে কোনো মানুষকেও এ শহরে প্রবেশ করতে দেবে না। যাতে এ রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। হাদিসের নির্দেশনাও এটি।

‘হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে বা অঞ্চলে যদি কোনে প্রকার প্লেগ বা মহামারি জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তোমরা যারা (ওই অঞ্চলের) বাহিরে আছ তারা ওই শহরে প্রবেশ করো না। আর যে শহরে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে তোমরা যদি সে শহরে বসবাস করো তবে তোমরা সে অঞ্চল বা শহর থেকে বাহির হয়ো না।’ (বুখারি, মুসলিম)

চীনের এ হুবেই প্রদেশে বসবাস করে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। চীন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে এ শহর থেকে দেশি কিংবা বিদেশি কোনো মানুষকেই এখনই স্থান ত্যাগ তথা বিদেশিদের নিজ নিজ দেশে যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সরাসরি হাদিসের আমল, যা দেড় হাজার বছর আগেই ঘোষণা করেছিলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

করোনাভাইরাস এক অজানা আতঙ্ক। রাসুলে আরাবি মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন অন্যায়, জুলুম ও অশ্লীলতার কারণে আল্লাহ তাআলা জালেম ও অন্যায়কারীদের ওপর অপরিচিত মহামারি চাপিয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ)

চীনের করোনাভাইরাস সে রকম ইঙ্গিতই বহন করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘করোনাভাইরাসটি সার্স বা ইবোলঅর চেয়েও অনেক বেশি বিপজ্জনক। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে চীনে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ৮ হাজার ৯৮ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। যার মধ্যে মারা যায় ৭৭৪ জন। সেটিও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো হলো কাশি, জ্বর, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ও নিউমোনিয়া।

মহামারীর রূপধারণকারী এ ভাইরাস থেকে মুক্তি লাভে হাদিসের ওপর আমল করার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিকল্প নেই। বেশি বেশি ইসতেগফার করে জুলুম থেকে বিরত থাকাও জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ পুরো মানবজাতিকে দুনিয়ার সব অপরিচিত রোগব্যাধি থেকে হেফাজত করতে অন্যায় জুলুম ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।