বইমেলা মাতালো সিসিমপুর

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সময়কে শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়টা খুদে পাঠকদের মেলাপ্রাঙ্গণে বই কেনার সঙ্গে নেচে-গেয়ে আনন্দ করার।

এ জন্যই গত কয়েক বছর ধরেই মেলা কর্তৃপক্ষ শিশুদের আনন্দ দিতে প্রতি শুক্র-শনিবার সকালে সুযোগ করে দেন বিটিভির শিশুতোষবিষয়ক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর লাইভ শো’ দেখার। শনিবারও (৮ ফেব্রুয়ারি) এর ব্যতিক্রম ছিল না।

শিশুপ্রহর উপলক্ষে বেলা ১১টায় খোলা হয় মেলার গেট। এরপরই মা-বাবার হাত ধরে আনন্দ করতে করতে মেলাপ্রাঙ্গণে প্রবেশ করে শিশুরা। মেলায় ঘোরাঘুরি করতে করতে কিনে নেয় নিজেদের পছন্দের বই।

ছোটদের বিজ্ঞানের খেলা, আইকিউ মাস্টার, মজার মজার ধাঁধা, টোনাটুনির ম্যাজিক, বিজ্ঞানের বিস্ময় ও আবিষ্কার- স্টলে স্টলে সাজানো এ ধরনের মজাদার বই বেশ আকৃষ্ট করে খুদে পাঠকদের।

মেলার গেট খোলার কিছুক্ষণ পরই শিশুচত্বরে একে একে হাজির হয় সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্র টুকটুকি, হালুম, শিকু, ইকরি। বেজে ওঠে ‘চলছে গাড়ি সিসিমপুরে, চলছে গাড়ি সিসিমপুরে’…।

টেলিভিশনের পর্দায় দেখা প্রিয় সিসিমপুর সরাসরি দেখার সুযোগ কে না হাত ছাড়া করতে চায়। তাই তো মেলাপ্রাঙ্গণের শিশুরা বাবা-মার সঙ্গে ছুটে আসে শিশুচত্বর। সিসিমপুরের চরিত্রগুলোর গঙ্গে নেচে-গেয়ে মেলাপ্রাঙ্গণ মুখর করে তোলে শিশুপাঠকরা। সঙ্গে চলে ছবি তোলা।

বইমেলার যে মঞ্চে সিসিমপুর শো হয়, সেই মঞ্চের তত্ত্বাবধায়নে থাকা রাজু নামের একজন বলেন, বইমেলা যতদিন চলবে ততদিন শুক্রবার ও শনিবার সিসিমপুরের শো হবে। শিশুদের বিনোদন দেয়ার জন্যই আমরা এ শো আয়োজন করেছি।

পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে মেলায় আসা মাহফুজ বলেন, ছেলে ফাহিমকে মেলা ঘুরিয়ে দেখার জন্য নিয় এসেছি। আজ বই কেনার কোনো উদ্দেশ্য নেই। স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে ঘোরাঘুরির জন্যই মেলায় আসা। সিসিমপুর দেখে ছেলে খুব আনন্দ পেয়েছে। যতক্ষণ সিসিমপুর চলেছে ফাহিম বুঁদ হয়ে গেছে। আমরা বেশ উপভোগ করেছি।

বাবা-মার সঙ্গে মেলা আসা জিনিয়া নামের ৬ বছরের এক শিশু বলে, সিসিমপুরের টুকটুকি আর শিকুকে আমার খুব ভালো লাগে। ওরা কী সুন্দর করে কথা বলে। হালুম ইকরিও ভালো। শিকু বেশি ভালো।

আরাফাত নামের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছি। তিনটি বই কিনেছি। এগুলো বাসায় গিয়ে পড়ব। মেলায় ঘুরতে খুব ভালো লাগছে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে সিসিমপুর। টুকটুকি, হালুম, শিকু, ইকরিরা খুব ভালো। কী সুন্দর করে কথা বলে।

মিরা নামের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, গত বছর বাবা-মার সঙ্গে এখানে এসেছিলাম। আজ বাবার সঙ্গে এসেছি। বাসায় দাদু আছে তাই মা আসেনি। মার সঙ্গে আর একদিন আসব।

এই শিশু আরও বলে, আমার সিসিমপুর খুব ভালো লাগে। নিয়মিত টিভিতে সিসিমপুর দেখি। টিভির থেকে এখানে সিসিমপুর দেখে বেশি মজা হয়েছে। অনেক আনন্দ করেছি। এখন মেলা থেকে দুটি বই কিনব ঠিক করেছি। বাবা বলেছেন আমার পছন্দের বই কিনে দেবেন। আমি গোয়েন্দা কাহিনীর বই কিনব।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে একদিন পিছিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় এবারের বইমেলা। মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় আট লাখ বর্গফুট জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বইমেলা। পুরো বইমেলা প্রাঙ্গণে মুজিববর্ষ উদযাপনের ছোঁয়া লেগেছে। নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে মেলাপ্রাঙ্গণ।

বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি স্টল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি স্টলসহ মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। লিটল ম্যাগাজিনকে ১৫২টি স্টল বরাদ্দ ছাড়াও ছয়টি উন্মুক্ত স্টল রাখা হয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ মেলা।

ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। ছুটির দিন মেলা খোলা থাকবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা থাকবে।

প্রতিদিন বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতাকে নিয়ে ২৫টি বই প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। নতুন এসব বই নিয়েও আলোচনা করা হবে। এছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।