হাবসি শাসন

হাবসি শাসন চলেছিল ১৪৮৭ সাল থেকে ১৪৯৩ সাল পর্যন্ত মোট ছয় বছর।

বাংলায় হাবসি শাসন ছয় বছর (১৪৮৭-৯৩) স্থায়ী ছিল। এই সময়কালে এ দেশের ইতিহাস ছিল অন্যায়, অবিচার, ষড়যন্ত্র, বিদ্রোহ আর হতাশায় পরিপূর্ণ।

পূর্ব আফ্রিকার দেশ আবিসিনিয়ার অধিবাসীদের হাবসি বলা হয়। আবিসিনিয়ার বর্তমান নাম ইথিওপিয়া। দেশটি লোহিত সাগরের পশ্চিম তীরে অবস্থিত। লোহিত সাগর পার হলেই পূর্ব পারে ইয়েমেন ও সৌদি আরব। হাবসি নামটির উৎপত্তি হয়েছে আরবি আল-হাবস থেকে। আরবরা     আল-হাবস বলতে বোঝাত আবিসিনিয়াকে। পর্তুগিজ জাহাজের ক্যাপ্টেনরা একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে বাণিজ্যিক পণ্যের সঙ্গে হাবসিদের ধরে এনে ভারত উপমহাদেশে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত। অবশ্য বেশ কিছু আবিসিনিয়াবাসী স্বেচ্ছায় ভাগ্যোন্নয়নের উদ্দেশ্যে উপমহাদেশে হাজির হয়। ইলিয়াস শাহ সুলতান বংশের সুলতান বরবক শাহ আবিসিনীয় ও হাবসি ক্রীতদাস আমদানি করে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ দেন।

১৪৮৭ সালে ইলিয়াস শাহী বংশের শেষ সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহকে হত্যা করে সুদূর আবিসিনিয়া থেকে আমদানি করা হাবসি প্রাসাদরক্ষী বা পাইকদার বারবক শাহ পাইকদার সুলতান উপাধি গ্রহণ করে সিংহাসনে আসীন হন। বাংলায় শুরু হয় দাস বংশ।

এ যুগে চারজন হাবসি সুলতানকেই খুন করা হয়। হাবসি নেতা বারবক শাহজাদা ক্ষমতায় বসার কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি নিহত হন হাবসি সেনাপতি মালিক আন্দিলের হাতে। মালিক সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। তাঁর তিন বছরের রাজত্বকালের ইতিহাস কিছুটা গৌরবের ছিল। অবশেষে প্রাসাদরক্ষীদের হাতে তার মৃত্যু হয়। এবার ক্ষমতায় আসেন দ্বিতীয় নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ। কিন্তু কিছুকাল রাজত্ব করার পরই তিনি নিহত হন। এক হাবসি সর্দার তাকে হত্যা করে শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন (১৪৯১-৯৩ সাল)। অত্যাচারী ও হত্যাকারী হিসেবে তার কুখ্যাতি ছিল। ফলে গৌড়ের সম্ভ্রান্ত লোকেরা মুজাফফর শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেন মুজাফফর শাহের উজির সৈয়দ হুসেন। অবশেষে নিহত হন মুজাফফর শাহ। এইভাবে ১৪৯৩ সালে অবসান ঘটে বাংলার হাবসি শাসনের যুগ।